ইস্তেগফার ও তওবা

‘ইস্তেগফার’ আরবি শব্দ ৷‘ইস্তেগফার’ অর্থ হচ্ছে ক্ষমা চাওয়া। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। ইস্তেগফার হচ্ছে তাওবার দিকে যাওয়ার পথ।

‘তওবা’ অর্থ হচ্ছে অনুশোচনা করা। মহান আল্লাহতালার কাছে ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা গুনাহের জন্য মনে মনে লজ্জিত হওয়া, ভবিষ্যতে আর না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করা এবং মানুষের বা আল্লাহর কোনো হক থাকলে তা আদায় করে দেয়া। 

তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবেঃ

১.একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই তওবা করতে হবে।

২.কৃত গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে।

৩.পুনরায় সে গোনাহে জড়িত না হওয়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে।


আপনি তাহাজ্জুদ পড়ে ইস্তেগফার করতে পারেন ৷ তখন দুআ কবুল হয় ৷অথবা যে কোনো সময়, যে কোনো মুহূর্তে আপনি তাওবা ইস্তেগফার করতে পারন ৷

ইস্তেগফার করার বা ক্ষমা চাওয়ার ৫টি দোয়া নিম্নে উল্লেখ করলামঃ

দুআ-১

সব চেয়ে ছোট ইস্তেগফার হলো

উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হ।

অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

(মিশকাত-৯৬১) সাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’’ বলতেন।   

এছাড়াও  টয়লেট-বাথরুম ছাড়া যেকোন স্থানে এই ইস্তেগফার টি পড়ে সারাক্ষণ জিহবা ভিজিয়ে রাখুন এর ফজিলত অনেক বেশি।


দুআ-২:

উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।

অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।

(বুখারী-৬৩০৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইসতিগফার করতেন। [বুখারী-৬৩০৭]


দোয়া-৩:

উচ্চারণঃ "আস্‌তাগফিরুল্ল-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি"

অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তওবা্ করি। 

(আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭, মিশকাত-২৩৫৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্ত করা গোলাম বিলাল ইবনু ইয়াসার ইবনু যায়দ বলেন, আমার পিতা আমার দাদার মাধ্যমে বলেন, আমার দাদা যায়দ বলেছেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন।

এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন-যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়। 

দুাআ-৪:

উচ্চারণঃ ‘রব্বিগফিরলী ওয়াতুব্ ‘আলাইয়্যা ইন্‌নাকা আন্‌তাত্ তাও্ওয়া-বুল গফূর’’ 

 অর্থঃ  হে রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমার তওবা্ কবূল করো। কেননা তুমি তওবা্ কবূলকারী ও ক্ষমাকারী। 

(আবূ দাঊদ-১৫১৬, ইবনু মাজাহ-৩৮১৪, তিরমিযী-৩৪৩৪, মিশকাত-২৩৫২) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একই মাজলিসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইসতিগফার একশ’বার গণনা করতাম। 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।

দোয়া-৫: সাইয়েদুল ইস্তিগফার-বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দুআ -

সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ এর ফজিলত

ইস্তেগফারের ফজীলত:

তওবা ও ইস্তিগফার আল্লাহ তাআলার অতি পছন্দের একটি ইবাদত। তাই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তওবা ও ইস্তিগফার করতেন। অনুরূপ ইমানের পর নামাজ প্রধান ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও এই নামাজ আদায়ের পর তিনবার ইস্তিগফার পড়া সুন্নত। 


অর্থাৎ ইস্তিগফার শুধু পাপের পরে নয়, ইবাদতের পরেও করা হয়। যেমন হজের পর ইস্তিগফার করা বিষয়ে কোরআনে উল্লেখ আছে-অতঃপর তোমরা প্রত্যাবর্তন কর, যেখান থেকে মানুষেরা প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৯৯)।


ইস্তেগফারকারীর ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকেন। কারণ সে নিজের গোনাহ ও অপরাধ স্বীকার করে সততার পরিচয় দিয়েছে।

ইস্তেগফার আল্লাহর ইবাদত। ইস্তেগফারের কারনে গুনাহ মাফ হয়, বৃষ্টি বর্ষণ হয়।


সন্তান ও সম্পদ দ্বারা সাহায্য করা হয় এবং জান্নাতের অধিকারী করা হয়। ইস্তেগফারের ফলে সর্বধিক থেকে শক্তি ও সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়।


আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তিনি তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন” (সুরা হুদ ৫২) ইস্তেগফারের ফলে সুখ-সমৃদ্ধি ও প্রাপ্য হক অর্জিত হয়।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তি ইস্তেগফারকে অবশ্যম্ভাবী করবে।


আল্লাহ তাকে সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করবেন এবং সকল পেরেশানী থেকে তাকে নাজাত দেবেন আর এমন জায়গা থেকে রিযিক দেবেন, যার কল্পনা পর্যন্ত সে করেনি ।”


রাসূল (সা.) ইস্তেগফারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে বলেন (অথচ তিনি মা’সুম-নিষ্পাপ), হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার ও তাওবা করো।


কারণ আমি নিজেও দৈনিক শতবার তাওবা-ইস্তেগফার করি।


অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেন, যার আমলনামায় ইস্তেগফার অধিক সংখ্যায় পাওয়া যাবে তার জন্য রইল সুসংবাদ।

ইস্তেগফারের ফলে বালা-মুসিবত দুরীভূত হয়।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আযান বাংলা উচ্চারণ অর্থ সহ।

ইসমে আজম; মনের আশা পূরন হওয়ার দোয়া

সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ এর ফজিলত